চট্টগ্রামের রাস্তায় সকাল হলে চোখে পড়ে হলুদ-নীল দোতালা বাস। ‘স্মার্ট স্কুল বাস’ নামে পরিচিত এই যানগুলো শুধু শিক্ষার্থীদের পরিবহন নয়, একসময় ছিল গর্বের প্রতীকও। কারণ, ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে চালু হওয়া এই প্রকল্পের জন্যই চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন জিতেছিল ‘স্মার্ট জেলা উদ্ভাবন চ্যালেঞ্জ-২০২৩’-এর প্রথম পুরস্কার এবং ৮০ লাখ টাকা। কিন্তু সেই পুরস্কারজয়ী প্রকল্পই আজ থমকে আছে মাত্র ৬ লাখ টাকার জন্য।
২০২৩ সালের ২৭ নভেম্বর তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের উদ্যোগে চালু হয় স্মার্ট স্কুল বাস সার্ভিস। নগরীর পাঁচটি রুটে ১০টি দোতালা বাসে প্রতিদিন ২,৫০০ থেকে ৩,০০০ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক চলাচল করতেন। জিপিএইচ ইস্পাতের বিজ্ঞাপন স্পন্সরশিপেই প্রথম বছর এগিয়ে যায় প্রকল্পটি।
প্রকল্পের সাফল্যের জন্যই ‘স্মার্ট স্কুল বাস’ আইডিয়াটি জিতে নেয় প্রথম পুরস্কার। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে জেলা প্রশাসক গ্রহণ করেন ৮০ লাখ টাকার চেক। কিন্তু বাস্তবতার কঠিন ধাক্কা সামলাতে পারেনি উদ্যোগটি। জিপিএইচ ইস্পাত প্রথম বছরে ৭২ লাখ টাকা খরচ বহন করলেও দ্বিতীয় বছরে জানিয়ে দেয়—ব্যবসা মন্দা, তাই আর অর্থায়ন সম্ভব নয়।
ফলে ২০২৫ সালের শুরুতেই বাসগুলো চালানো নিয়ে তৈরি হয় সংকট। প্রতিমাসে ৬ লাখ টাকার ঘাটতি মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে বিআরটিসি।
সচেতন মহলের অভিযোগ, প্রকল্প চালুর সময় তড়িঘড়ি করে স্পন্সরশিপ দিয়েছিল জিপিএইচ ইস্পাত। কিন্তু সুবিধা নেওয়ার পর তারা বিভিন্ন অজুহাতে সরে দাঁড়াচ্ছে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এখনো কোনো নতুন স্পন্সর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রথম থেকেই বাসগুলোতে টিকিট ব্যবস্থা না রেখে ভাড়ার বাক্স রাখা হয়েছিল। শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছায় পাঁচ টাকা করে দেবে—এমন পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু বাস্তবে খুব কম শিক্ষার্থীই সেই টাকা দেয়। এখন জেলা প্রশাসন ২২টি স্কুলের সঙ্গে বৈঠক করেছে। শিক্ষার্থীদের বেতনের সঙ্গে বাস ভাড়া অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ চলছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. শরীফ উদ্দিন বলেন,‘স্মার্ট স্কুল বাস প্রকল্পে জিপিএইচ ইস্পাত অর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়ায় একটি আর্থিক সংকট তৈরি হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নির্ধারিত হারে অর্থ সংগ্রহের বিষয়টি সঠিকভাবে পরিচালনার চেষ্টা করছি এবং পাশাপাশি নতুন কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। তারা যদি স্পন্সর করে, তাহলে এই সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।’
বিআরটিসির ম্যানেজার (অপারেশন) জুলফিকার আলী জানান, ‘জেলা প্রশাসনের অনুরোধে আমরা গত আটমাস ধরে বাস গুলো নিজস্ব খরচে চালাচ্ছি। জিপিএইচ স্পন্সর ক্যানসেলের চিঠি দেওয়ার পর গত আট মাসে দুইটি স্কুল থেকে আমরা ৯০ হাজার টাকা পেয়েছি মাত্র। যদি নতুন স্পন্সর পাওয়া না যায় তাহলে আমরা এই প্রকল্পটি আর চালিয়ে যেতে পারবো না।’
শুধু স্কুলবাস নয়, তৎকালীন জেলা প্রশাসকের আরেক প্রকল্প পর্যটন বাস সার্ভিসও এখন বন্ধের মুখে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ—দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া প্রকল্পগুলো নেওয়ায় এখন টিকে থাকার লড়াই করতে হচ্ছে।