স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, স্থানীয় নির্বাচনে চাকরিজীবীরা যাতে প্রার্থী হতে পারেন, সে বিষয়ে কমিশন একটি প্রস্তাব উত্থাপন করবে। তিনি আরও জানান, উপজেলা, ইউনিয়ন, পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশনের নির্বাচন একই দিনে একত্রে আয়োজন করার প্রস্তাবও থাকবে।
রোববার (২৯ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম নগরীর হোটেল দ্য পেনিনসুলায় স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমাদের দেশে নির্বাচনের ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। এটি দুটি দিক থেকে ব্যয়বহুল—একটি প্রার্থীর জন্য, আরেকটি সরকারের জন্য। নির্বাচন কমিশন থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তিনি জানান, গত সরকারের সময়ে উপজেলা, ইউনিয়ন, পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশনের যে নির্বাচনগুলো হয়েছিল, তাতে খরচ হয়েছিল ২৩ হাজার কোটি টাকা। এই নির্বাচনে ১৯ লাখ লোক নিয়োগ করা হয়েছিল এবং ২২৫ দিন সময় লেগেছিল। এসব নির্বাচনের কারণে অনেক টাকা এবং সময় নষ্ট হয়, যার ফলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়ে কাজকর্মেও বিঘ্ন ঘটে।
তিনি বলেন, সাধারণত একটি অভিযোগ থাকে—ভোট কেনাবেচা হবে। নির্বাচনে খরচের পরিমাণ শুধু সংসদীয় নির্বাচনেই সীমাবদ্ধ নয়। মেয়র হতে হলে ৪১টি ওয়ার্ডে খরচ করতে হয়। নির্বাচন থেকে এই খরচ কমাতে হবে, অন্যথায় ভালো মানুষ নির্বাচনে আসতে পারবেন না। এ কারণে কমিশন প্রস্তাব করবে, উপজেলা, ইউনিয়ন, পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশনের নির্বাচন একসাথে একই দিনে আয়োজন করা হোক। এতে খরচ হবে ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা এবং সময় লাগবে মাত্র ৪০ থেকে ৪৫ দিন।
কমিশনের চেয়ারম্যান ড. তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, চাকরি কিংবা অন্য পেশায় যুক্ত ব্যক্তিরাও মেয়র বা কাউন্সিলর হতে পারবেন। তবে ফুলটাইম এক্সিকিউটিভ বডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা হলে তাঁরা এককভাবে দায়িত্ব নেবেন না, বরং কয়েকজনকে নিয়ে একটি এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল গঠন করবেন, যেমন কলকাতা কিংবা লন্ডন সিটি করপোরেশন ব্যবস্থায় দেখা যায়। চেয়ারম্যান ফুলটাইম দায়িত্ব পালন করবেন এবং তাঁকে সাহায্য করবেন দুই-তিনজন মেম্বার। এছাড়া একটি বিকল্প প্রস্তাবও রয়েছে, যা হতে পারে রোটেটিং ভিত্তিতে দুই বা এক বছরের জন্য দায়িত্ব প্রদান করা।
দলীয় প্রতীকে নির্বাচন সম্পর্কে ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, কেউ কেউ এই ব্যবস্থা চান না। তবে, যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন, তারা রাজনীতি করেন। তবে একদম দলীয় প্রভাব মুক্ত নির্বাচন সম্ভব নয়। সম্ভবত এক দলের পক্ষ থেকে একাধিক প্রার্থী দাঁড়াতে পারেন। যদি আমরা এটি বাস্তবায়ন করতে পারি এবং সরকারি চাকরি বা অন্য কোন পেশায় যুক্ত থাকলে কাউন্সিলর বা মেম্বার হওয়া যায়, তবে নির্বাচনে কোয়ালিটির পরিবর্তন হবে বলে তাঁর ধারণা।
‘না ভোট’ বিষয়ক প্রস্তাবনা সম্পর্কে তিনি বলেন, নির্বাচন সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে এই বিষয়ে নানা মতামত সংগ্রহ করেছে এবং কমিশন এখনও এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে। অনেক মানুষ ‘না ভোট’ এর পক্ষে মত দিয়েছেন। যদি ‘না ভোট’ প্রবর্তন করা যায়, তাহলে এটি একটি চেকপয়েন্ট হিসেবে কাজ করবে এবং অতীতে সংসদ সদস্য পদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া যে ঘটনা ঘটেছিল, তা এড়ানো যাবে। তাছাড়া সংরক্ষিত আসন ব্যবস্থা যুগ যুগ ধরে চলতে থাকা যুক্তিযুক্ত নয়। এজন্য আগামী তিনটি নির্বাচনে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে সংরক্ষিত আসন রাখা হবে।
কবে নাগাদ কমিশন রিপোর্ট জমা দেবে—এমন প্রশ্নে তিনি জানান, কমিশনের অফিসিয়াল রিপোর্ট জমা দেওয়ার সময় ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত রয়েছে। কমিশন যথাসম্ভব এই সময়ের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার চেষ্টা করবে।
এ সভায় উপস্থিত ছিলেন— সংস্কার কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. ফেরদৌস আরফিনা ওসমান, আবদুর রহমান, ড. মাহফুজ কবীর, মাশহুদা খাতুন শেফালি, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম, ইলিয়া দেওয়ান, অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম প্রমুখ।